আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য।
চট্টগ্রামের চাটগছার আন্দরকিল্লার সাথে মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনী সম্পর্কিত। এই কিল্লা বা কেল্লায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ'র ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভিতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় "আন্দরকিল্লা"। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে নির্মাণ করেন "আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ"।
১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের আরেক শাসনকর্তা নবাব ইয়াসিন খাঁ, এই জামে মসজিদটির কাছাকাছি, পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি টিলার উপর আরেকটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করে তাতে "কদম-রসূল" রাখলে সাধারণ্যের কাছে ঐ মসজিদটি গুরুত্ব পেয়ে যায় এবং আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ লোকশূণ্য হয়ে পড়ে। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, এই মসজিদটিকে গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক হামিদুল্লাহ খাঁ'র আবেদনের প্রেক্ষিতে মসজিদটি মুসলমানদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হয়।
১৬৬৭ সালে এই মসজিদ নির্মাণের পর থেকেই চট্টগ্রামের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হয়ে উঠে আন্দরকিল্লার এই মসজিদ। এই মসজিদের ইমাম/খতিব নিযুক্ত হতেন পবিত্র মদিনার আওলাদে রাসুল (রাঃ) গন। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই এই মসজিদ জনপ্রিয় হয়ে পরে। বলা বাহুল্য যে, এই জুমা মসজিদে প্রতি জুম্মায় চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মুসল্লিরা এসে নামায আদায় করতেন এবং পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমায় কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও মানুষের সমাগমের নজির আছে। রোজা, ফিতরা এবং ঈদের চাঁদ দেখা প্রশ্নে এই মসজিদের ফয়সালা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ মেনে চলত অবধারিতভাবে। আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের স্থাপত্য ও গঠন মোঘল রীতি অনুযায়ী তৈরি। সমতল ভুমি থেকে প্রায় ত্রিশ ফুট উপরে ছোট্ট পাহারের উপর এর অবস্থান। মূল মসজিদের নকশা অনুযায়ী এটি ১৮ গজ (১৬ মিটার) দীর্ঘ, ৭.৫ গজ (৬.৯ মিটার) প্রস্থ এবং প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২.৫ গজ (২.২ মিটার) পুরু। পশ্চিমের দেয়াল পোড়া মাটির তৈরি এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের তৈরি। মধ্যস্থলে একটি বড় গম্বুজ এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা ছাদ আবৃত। ১৬৬৬ সালে নির্মিত এর চারটি অষ্টভূজাকৃতির বুরুজগুলির মধ্যে এর পেছনদিকের দুটি এখন বিদ্যমান। মসজিদটির পূর্বে তিনটি ও উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহরাব থাকলেও সাধারণত মাঝের ও সর্ববৃহৎ মেহরাবটিই ব্যবহৃরিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, মসজিদটি নির্মাণ কৌশলগত দিক থেকে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের প্রায় প্রতিচ্ছবি হওয়ায় এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুসলিম স্থাপত্য বিকাশের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রার জন্ম দেয়। এই মসজিদটি দিল্লি জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মিত বলে এই মসজিদকে পাথরের মসজিদ-"জামে সঙ্গীন"ও বলা হয়ে থাকে। শুধু স্থাপত্য নিদর্শনেই নয়...... শৈল্পিকদিক থেকেও এই মসজিদ উল্লেখ্য। কারন চট্টগ্রামে মুসলিম বিজয়ের স্মারকস্বরূপ হিশাবে শিলালিপি ভিত্তিক জেসব স্থাপনা আছে, সেইগুলোর মাঝে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের গায়ের শিলালিপি অন্যতম। মসজিদের মূল ইমারতের প্রবেশপথে কালো পাথরের গায়ে খোদাইকৃত সাদা অক্ষরে লেখা ফার্সি লিপির বঙ্গানুবাদ জা দাঁড়ায় তা হলঃ "হে জ্ঞানী, তুমি জগতবাসীকে বলে দাও, আজ এ দুনিয়ায় ২য় কাবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাকাল ১০৭৮ হিজরি(১৭৬৬ সাল)। " এই শিলালিপি থেকে এর প্রতিষ্ঠাতার নামও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, এই মসজিদে পাওয়া সকল শিলালিপির সাথে সিরিয়ার "রাক্কা নগর"-এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারচট্টগ্রামেরনন্দনকাননেঅবস্থিত। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি১৮৮৯খ্রিস্টাব্দে এই বিহার প্রতিষ্ঠা করে। এই বিহার বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অন্যতম পূণ্যস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।
শতাব্দী পুরাতন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির (তৎকালীন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতি) প্রথম সভাপতি শ্রীমৎ উ. গুনামেজু মহাথের এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিরকৃষ্ণ চৌধুরী বিহার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। প্রাথমিকভাবে ভক্ত এবং পূজারীদের আর্থিক সহযোগিতায় ভবনটির একতলা নির্মিত হয়। ১৯০৩সালে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাস্থ রংমহলপাহাড়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালনির্মাণের জন্য মাটি খননকালে একটা পুরাতন বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া যায়। বিহারেরসে সময়ের অধ্যক্ষ অগ্ গমহা পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এর তৎপরতার কারণে মূর্তিটি বঙ্গীয় সরকার এ বিহারে প্রদান করে। বিহারের মূল ভবনটির পাশেই অপর একটি মন্দিরে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। এটি “বুড়াগোঁসাই মন্দির” নামে পরিচিত।
১৮৮৯সালে প্রতিষ্ঠার পর এই বিহারের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন অগ্ গমহা পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের, দ্বিতীয় অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের, তৃতীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী, চতুর্থ অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমৎ সুবোধিরত্ন মহাথের, পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতিঃপাল মহাথের এবং ষষ্ঠ অধ্যক্ষ আছেন শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। ২০০৫সালে বিহারে প্রবেশের দুই পাশে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এবং অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী মহাস্থবিরের স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়াও বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধেরআসনের নিচে দুইপাশে পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এবং শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এর আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।
বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
গৌতম বুদ্ধের কেশধাতু
ত্রিশের দশকে আচার্য শাক্য নামে তিব্বতের এক সন্ন্যাসী চট্টগ্রাম ভ্রমণে আসেন। তিনি তখন কিছুদিনের জন্য বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন এবং বিহারের অধ্যক্ষ অগ্ গমহা পন্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথেরকে বুদ্ধের কেশধাতু প্রদান করেন। অতি দুর্লভ এই কেশধাতুর কিছু অংশ ১৯৫৮ সালে শ্রীলংকায়, ১৯৬৪ সালে জাপানে, ১৯৭৯ সালে থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদান করা হয়। শ্রীলংকার সরকার ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বৌদ্ধ সমিতি হতে আবারো কেশধাতু গ্রহণ করে।
বিহার প্রাঙ্গণের বোধিবৃক্ষ।
থাইল্যান্ড থেকে আনা গৌতম বুদ্ধেরদুই প্রধান শিষ্য অগ্রশ্রাবক ধর্মসেনাপতি “সারিপুত্র” এবং ঋষিশ্রেষ্ঠ “মহামোগলায়ন” মহাস্থবিরদ্বয়ের অষ্টধাতুর নির্মিত মূর্তি বুড়াগোঁসাই মন্দিরে স্থাপন করা হয়।
শ্রীলংকার সরকারপ্রদত্ত গৌতম বুদ্ধেরস্মৃতিধন্য বোধিবৃক্ষেরএকটি চারা ১৯৮০সালের ১৫ নভেম্বরচট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারেরোপণ করা হয়। ১৯৯১সালে বোধিবৃক্ষেরনিচে বোধিমন্ডপ নির্মাণ করা হয়।
চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন দূর্লভ পাণ্ডুলিপিসমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার আছে। এটির নাম চিন্তামনি গ্রন্থাগার। এখানে তালপাতার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। এই সংগ্রহশালায় আছে পালি ভাষা, বর্মী ভাষা, সংস্কৃত ভাষায়রচিত প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্র। শাস্ত্রীয় সাহিত্য এবং তালপাতায় রচিত শিল্পকর্ম এই গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করেছে।
বৌদ্ধ বিহারে এছাড়াও আছে বুড্ডিষ্ট হোস্টেল, ধম্মবংশ ইন্সটিটিউট, চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি।
চট্টেশ্বরী মন্দির
শ্রী শ্রী চট্টেশ্বরী কালী মায়ের বিগ্রহ মন্দিরবাংলাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম। জনশ্রুতি মতে, প্রায় ৩০০-৩৫০ বছর পূর্বে আর্য ঋষি যোগী ও সাধু সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে শ্রী শ্রী চট্টেশ্বরী দেবীর প্রকাশ ঘটে। এটি বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী সড়কে তিন পাহাড়ের কোনে অবস্থিত।
মূল রাস্তা থেকে একটু উঁচুতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মধ্যের বাঁধানো চত্বরটির বাঁদিকে কালী মন্দির ও ডানদিকে শিব মন্দির। শিব মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি কুন্ড।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরসময় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা এই মন্দিরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবঙ মন্দিরের সেবায়েতের বাড়ী ও বিগ্রহ বিনষ্ট করা হয়। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর মন্দিরের সেবায়েত ডাঃ তারাপদ অধিকারী তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য মন্ত্রী তরুণ কান্তি ঘোষ এবং সনাতন ধর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতায় কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি ও শ্বেত পাথরের শিব মূর্তি পুনঃনির্মান করেন, যাতে ও বাংলাদেশ সরকারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে।
কদম মোবারক মসজিদ,কদম মোবারক,চট্টগ্রাম
মোগল-আমলের অনুপম পুরাকীর্তি মোমিন সড়কের কদম মোবারক মসজিদ। এ মসজিদটি চসিক-এর অধীন জামালখান ওয়ার্ডে অবস্থিত। এই মসজিদ সংলগ্ন এলাকাটিও 'কদম মোবারক' নামে পরিচিত। কদম মোবারক নামটি এসেছে দুটি পাথরের পবিত্র পদচিহ্ন থেকে। এ মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি ছোট কামরা আছে। উত্তর দিকের কামরায় হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ডান পায়ের ছাপ বিশিষ্ট প্রস্তরখণ্ড সংরক্ষিত আছে। এর পাশে রয়েছে বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (র.)-এর পদচিহ্ন। কথিত আছে, মসজিদের প্রথম মুতওলি ইয়াছিন মুহাম্মদ খান পবিত্র মদিনা শরিফ থেকে মহানবী (স.)-এর কদমের ছাপ সংগ্রহ করেছিলেন। উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত আয়তাকার মসজিদটি পাঁচ গম্বুজের। একটি বড় গম্বুজ আর দুপাশে দুটি ছোট গম্বুজ য।র উত্তর ও দক্ষিণে চারকোনা আরও দুটি গম্বুজ রয়েছে। সামনের দেয়ালের মাঝের দরজার দুপাশে আছে খিলান দেওয়া তিনটি দরজা। দরজা-সোজা ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ...আছে তিনটি মেহরাব। স্থাপত্যের ক্ষেত্রে মোগলেরা খিলান গম্বুজ ও খিলান ছাদকে প্রাধান্য দিত। লতাগুল্মের নকশা, আরবি ক্যালিওগ্রাফি, জ্যামিতিক রেখাচিত্র, মোজাইক নকশা বসানো পাথরের সাজে সজ্জিত মসজিদটি। বিভিন্ন সময়ে সংস্কার ও সম্প্রসারণের পরও সর্বত্র প্রাচীনতা ও মোগল স্থাপত্যের সৌন্দর্য এতটুকু কমেনি। এ মসজিদকে কেন্দ্র করে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রতিষ্ঠা করেন কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা। এটিই চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এতিমখানা। গড়ে উঠেছে কদম মোবারক উচ্চবিদ্যালয় ও ইসলামাবাদী স্মৃতি মিলনায়তন। মুতওলি আজাদ উল্লাহ খান বলেন, ‘মসজিদ-দরগাসংলগ্ন প্রশস্ত আঙিনায় একটি ইসলামি গবেষণাকেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র ও কবরস্থান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া একটি আধুনিক ইসলামি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে।’
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন ঐতিহাসিক ছুটি খাঁ জামে মসজিদ। ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরনো মহাসড়কের পশ্চিম পাশে উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের আধাকিলোমিটার উত্তরে ছুটি খাঁ দীঘির পূর্ব পাড়ে এ মসজিদের অবস্থান।
এ মসজিদের ইতিহাস সম্বন্ধে জানা যায়, গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন লস্কর পরাগল খাঁ ও পরবর্তীতে তার ছেলে ছুটি খাঁ। পরাগল খাঁর পিতা রাস্তি খাঁ ও গৌড়ের শাসনকর্তা রুকুনুদ্দীন বারবাক শাহের শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন। পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ'র শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসন কেন্দ্র ছিল পরাগলপুর। এ সময় এখানে বেশ কিছু দিঘি ও কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ছুটি খাঁ মসজিদের মূল মসজিদটি বহুদিন আগে ভেঙে পড়েছে। পরবর্তীতে একটি মসজিদ নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। যেখানে মূল মসজিদের বেশকিছু ছোট-বড় পাথর ও শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। পুরনো মসজিদের কিছু ধ্বংসাবশেষ প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন হিসাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেছে বলে জানা যায়। পাথরগুলো ভারতের রাজস্থান বা অন্যান্য প্রদেশ থেকে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কৃষ্ণবর্ণের নানা ডিজাইন ও সাইজের পাথরগুলো মসজিদ প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখনো। স্থানীয়রা জানান, ছুটি খাঁ দিঘির অভ্যন্তরে ও মসজিদের ভেতরে একাধিক শিলালিপি রয়েছে। তার মধ্যে একটি শিলালিপিতে পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াতুলকুরসিলিখাআছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদ লিপি খোদিত পাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত ছিল। সেগুলো ইতস্তত পড়ে আছে বর্তমান মসজিদের আঙিনায়। কিন্তু সবগুলোতেই দেখা গেছে তোগরা হরফে কোরআনের নানা আয়াত ও আরবি দোয়া। তবে ঐতিহাসিক মূল্যবিশিষ্ট কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। ছুটি খাঁ কর্তৃক এ মসজিদ স্থাপন করা হয় ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে।
তবে মসজিদটির নির্মাতা পরাগল খাঁ নাকি ছুটি খাঁ, তার কোনো লিখিত সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। নির্মাতা যেই হোন, এ মসজিদটি অদ্যাবধি পাঁচশ বছর ধরে এ অঞ্চলের কীর্তিমান শাসক, পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা ও আরাকানী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক ছুটি খাঁ'র স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে।
বদর আউলিয়ার দরগাহ
চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি নগরীর বকশির হাট এলাকায় বদরপাতি রোডে অবস্থিত। বদর পীরের নামানুসারে স্থাপনাটির নামকরণ করা হয়। চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারক প্রথম সুফি সাধক হিসাবে বদর শাহই পরিচিত। চট্টগ্রামে তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- বদর আলম, বদর মোকাম, বদর পীর, বদর শাহ, বদর আউলিয়া প্রভৃতি। তাঁর আগমন নিয়ে অনেক মজার মজার কথা প্রচলিত আছে। বদর পীরের চাটির কথা চট্টগ্রামে আজো কিংবদন্তি; কেউ কেউ মনে করেন, বদর শাহের চাটি থেকে চাটিগ্রাম হয়ে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি।
চট্টগ্রাম মুসলমানদের রাজ্যভূক্ত হওয়ার আগে অর্থ্যাৎ ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম জয় করার আগেই ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর আরব থেকে হযরত বদর শাহ (রঃ) এখানে আসেন। বলা হয়, পাথরের বুকে চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেন তিনি। চট্টগ্রামের মানবব্রজিত পরিবেশে তিনি দৈত্যদানবের কাছ থেকে এবাদত করার জন্য এক চাটি পরিমাণ জায়গা চেয়ে নেন। চাটির আলো ও আজানের ধবনির বিস্তারে দৈত্য-দানবরা পালিয়ে যায়। এ ঐতিহ্যবাহী চাটি হতে চট্টগ্রামের নামকরণ বলে ব্যাপক জনশ্রতি আছে। আউলিয়া বদর শাহই প্রথম চট্টগ্রামে চেরাগ জেলে গোড়াপত্তন করেন এ শহরের। আর এই ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করছে মোমিন রোডস্থ 'চেরাগী পাহাড়'।
অনেকে মনে করেন , ১৪৪০ সালে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া বিহারের ছোট দরগাহে শায়িত পীর বদর উদ্দীন বদর -ই-আলম আর বন্দরনগরীর বদরপাতি পীর একই ব্যক্তি। কিন্তু এর সাথে দিমত পোষণ করেন। বদরশাহ মানুষের গানের মধ্য দিয়েও বেঁচে আছেন, তার প্রমাণ- মাঝিদের বিখ্যাত উদ্দীপনামূলক গান-"বদর বদর বদর বদর হেঁইয়ো--বদর বদর বদর বদর হেঁইয়ো"। চট্টগ্রামে পীর বদরের আস্তানা প্রায় সাড়ে ছয়শো বছরের স্মৃতি বহন করছে। পীর বদরের সমাধি ভবনটি সুলতানি আমলে তৈরী করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বখশী হামিদ মসজিদ
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার ইলশা গ্রামে একটি দীঘির পাড়ে নির্মিত প্রাচীন একটি মসজিদ। এই মসজিদটির নির্মাণ কৌশলের সাথে ঢাকার শায়েস্তা খান (আনুঃ ১৬৬৪ খৃঃ) মসজিদ এবং নারায়নগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের (আনুঃ ১৬৮০ খৃঃ) মিল লক্ষ্য করা যায়। মিহরাবের উপর স্থাপিত আরবী শিলালিপির বক্তব্য মতে, এটি সুলাইমান কররানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করার কথা থাকলেও লোকমুখে বখশী হামিদের নির্মিত মসজিদ বলে পরিচিত। বর্তমান এ মসজিদ এর পাশে একটী হেফজখানা রয়েছে।মসজিদ এবং হেফজখানার পরিচালনাই আছেন মাওলানা মুজিবুর রহমান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস