চট্টগ্রাম
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।
0
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রামে একটি বিখ্যাত মাজার শরীফ। বায়েজীদ বোস্তামী পারস্যের বিখ্যাত সুফি। তিনি সুলতান-উল-আরেফিন নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বোস্তাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামের এই বিখ্যাত দরগাহের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে।
অবস্থানঃ
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রাম সেনানিবাসের কাছে নাসিরাবাদের একটি ছোট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত।
ইতিহাসঃ
যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয় মুসলমান ফকির ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর জঙ্গলবেষ্টিত পাহাড়ের চূড়ায় আবাস স্থাপন করেন এবং মন্দির ও বিহারের অনুকরণে বায়েজীদ বোস্তামী ও আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর নামে মাজার শরীফ, সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করতেন। সম্ভবত এভাবে তারা জীবিকা অর্জন এবং মানুষকে সংঘবদ্ধ করতেন। তবে এটি সর্বজন স্বীকৃত যে, বায়েজীদ বোস্তামী চট্টগ্রামে মারা যান নি এবং চট্টগ্রামে তাঁর নামে পরিচিত সমাধিটি হচ্ছে একটি ‘জওয়াব’ বা অনুকৃতি।
এলাকার জনশ্রুতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম একটি সমুদ্রবন্দর এবং আরবরা তাদের বাণিজ্য জাহাজ নিয়ে আট শতকের দিকেও এ বন্দরে আসত। অতএব এটা অসম্ভব নয় যে, ঐ সুফি-সাধক নয় শতকে এ স্থানে এসেছিলেন। চট্টগ্রামে অবস্থানের পর প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। ইতিহাসের পন্ডিতগণ বিশ্বাস করেন যে, কবিতার শাহ সুলতান হচ্ছে সুলতান-উল-আরেফিনের সংক্ষিপ্ত রূপ এবং সে কারণে শাহ সুলতান এবং বায়েজীদ বোস্তামী অভিন্ন। কিন্তু এটা অনুমান মাত্র। বায়েজীদ বোস্তামীর চট্টগ্রাম ভ্রমণের কোন প্রামাণিক দলিল নেই।
বর্ণনাঃ
এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিস্কার করা হয়। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝি সমাধিটি অবস্থিত। পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মোঘল রীতির আয়তাকার মসজিদ রয়েছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত। সমাধির সামনে সমতলে একটি বিশালাকার দীঘি আছে।
সমাধিক্ষেত্র, মসজিদ এবং দীঘি নিয়ে দরগাহ কমপ্লেক্সটি গঠিত। দীঘিতে প্রচুর পরিমাণে কালো নরম শেলযুক্ত বোস্তামি কাছিম এবং গজার মাছ রয়েছে। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না। জনশ্রুতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপিষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী এই অঞ্চল ভ্রমণকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শত থেকে সাড়ে তিনশত কাছিমের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
প্রজনন ঋতুতে মাজারের প্রধান পাহাড়ের পিছনে সংরক্ষিত জায়গাগুলিতে কাছিম ডিম পাড়ে। দরগাহের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে মাজার কমিটি দীঘির কাছিম রক্ষা করে থাকে। এ কাছিমগুলি দর্শনার্থীদের নিকট অতিরিক্ত আকর্ষণের বিষয়। দর্শনার্থীরা এদেরকে কলা, খই ইত্যাদি খেতে দেয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস